নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্টেনলেস স্টিলের সামান্য এক ব্রেসলেট, মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গী হয়ে সেটিই হয়ে উঠেছে অসামান্য। মাশরাফির ১৮ বছরের সুখ-দুঃখের সঙ্গী সেই ব্রেসলেটের ওজন কতটা, বোঝা গেল নিলামে। যেটির ভিত্তিমূল্য ছিল ৫ লাখ টাকা, নিলামে তুমুল আগ্রহ ও লড়াই শেষে সেই ব্রেসলেট বিক্রি হলো ৪২ লাখ টাকায়!
ফেইসবুকে ‘অকশন ফর অ্যাশকন’ পেজ-এ নিলাম শেষে বিজয়ীর ঘোষণা দেওয়া হয় গতপরশু মধ্যরাতে। ব্রেসলেটটি কিনে নিয়েছে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিএলএফসিএ। নিলামের সর্বোচ্চ দর ছিল ৪০ লাখ। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাড়িয়ে দিয়েছে আরও ৫ ভাগ। তাতে চূড়ান্ত মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪২ লাখ টাকা। এই অর্থ দিয়ে মাশরাফির ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সহায়তা করা হবে করোনাভাইরাসের এই দুঃসময়ে অসহায় মানুষদের। তবে নিলামে বিক্রি হলেও ব্রেসলেট থাকবে হাতেই। বিএলএফসিএর চেয়ারম্যান মমিন উল ইসলাম জানিয়েছেন, এই ব্রেসলেট কিনে নিয়ে তারা আবার মাশরাফিকেই উপহার দিতে চান। এমনই সব চমৎকার এক রাতেরও সাক্ষী হয়ে থাকলো এই ব্রেসলেটটি।
দেড় যুগ আগে কাছের এক বন্ধুর মামাকে দিয়ে মাশরাফি বানিয়ে নিয়েছিলেন এই ব্রেসলেট। এরপর এই দীর্ঘ সময়ে ব্রেসলেটটি হাত থেকে খুলেছেন খুব কম সময়ের জন্য। নিলামে তোলার সময় তিনি বলছিলেন, এই ব্রেসলেট তার জীবনের কতটা জুড়ে আছে, ‘গত ১৮ বছরে খুব কম সময়ই এটি খুলেছি হাত থেকে। অপারেশনের সময়, এমআরআই করানোর সময় খুলতে হয়েছে। আর কয়েকটি ম্যাচ বা কিছু সময়ের জন্য খুলেছি শুধু। তবে যখনই খুলেছি, কখনোই স্বস্তি বোধ করিনি। মনে হতো, কী যেন নেই, খালি খালি লাগত। আমার সবসময়ই মনে হয়েছে, এটি আমার সৌভাগ্যের প্রতীক। আমার ক্যারিয়ারের সব উত্থান-পতনের স্বাক্ষী এই ব্রেসলেট। যত লড়াই করেছি, মাঠের ভেতরে-বাইরে যত কিছুর ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে, সব কিছুর স্বাক্ষী এটি। আমার ১৮ বছরের সুখ-দুঃখের সাথী। আমার অনেক আবেগ-ভালোবাসা জড়িয়ে এটিতে, এই ব্রেসলেটকে আসলে ব্যাখ্যা করা আমার জন্য খুব কঠিন।’
ব্রেসলেটের নিলাম থেকে যে মূল্য ও সম্মান পেয়েছেন, তাতে দারুণ অভিভূত মাশরাফি। জানিয়েছেন, শুধু নিজ এলাকা নড়াইলে নয়, এই অর্থ থেকে সহায়তা করা হবে নড়াইলের বাইরেও, ‘অসম্ভব ভালো লাগছে, অসম্ভব ভালো লাগছে। এই জিনিসটিই আমার জন্য অনেক ইমোশনাল। আমার আশাও ছিল না এত বেশি হবে। যে সম্মান আমাকে দেখানো হয়েছে, এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। নিলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ। এটির মূল উদ্দেশ্য হলো, মানুষকে যেন ভালো রাখতে পারি। যে অর্থ এসেছে, চেষ্টা করব যত বেশি মানুষকে সম্ভব ভালো রাখার।’
যারা সেটি কিনেছেন সেই বিএলএফসিএর চেয়ারম্যান মুমিন উল ইসলাম জানিয়েছেন, নিলামে অংশ নিয়ে এমন মূল্য দেওয়ার পেছনে তাদের ভাবনা। বিএলএফসিএর চেয়ারম্যান সরাসরি অনলাইন আলাপে মাশরাফিকে জানান, নিলামের খবর পেয়েই যে ভাবনা কাজ করেছে তাদের মাথায়, ‘আপনি এই দেশকে যে সম্মান এনে দিয়েছেন, সেই সম্মানের প্রতিদান আসলে কোনোভাবেই হয় না। কিন্তু এটুকু করে আমরা চেষ্টা করেছি, আপনাকে কিছুটা হলেও সম্মান জানাতে। নিলামের খবর জানতে পেরেই আমি এই সংগঠনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিইওদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই এক বাক্যে বলেছেন, যদি ভালো কাজে এই অর্থ ব্যয় হয় এবং আর্থিক খাত থেকে যদি বাংলাদেশের অধিনায়ককে সম্মান জানানো যায়, এর চেয়ে ভালো কিছু হয় না।’
তিনি জানান, টাকার অঙ্কে আসলে দেশের সফলতম অধিনায়কের হাতের এই স্মারকের মূল্যায়ন হয় না, ‘মাশরাফির এই স্মারকটি আসলে অমূল্য, কোনো মূল্য হয় না। তার পরও আমরা খুশি যে এই টাকায় ব্রেসলেটটি নিতে পেরেছি।’ নিলামে বিক্রি নিশ্চিত হওয়ার পরই মাশরাফি তার হাত থেকে ব্রেসলেট খুলে ফেলে বলেন, ‘এই যে, খুলে ফেলেছি। এটা আপনাদের, এখন আমার হাত খালি।’ কিন্তু চমকের বাকি ছিল আরও। মমিন উল জানান মাশরাফির ব্রেসলেট কিনে আবার তাকেই সেটা উপহার দিবেন তারা, ‘এই ব্রেসলেট ১৮ বছর ধরে আপনার সঙ্গে আছে, এটি আপনার হাতেই মানায়। আমরা এই ব্রেসলেট আপনাকেই উপহার দিতে চাই। সেই শুভক্ষণের অপেক্ষায় আমরা।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।